
প্রতিদিনের মতো আজও স্টোর রুমে চালের ড্রাম থেকে চাল নিতে এসেছি। স্টোর রুমের এক পাশ
থেকে হঠাৎ শব্দ পেলাম, তাকিয়ে দেখি একটি মা বিড়াল। স্টোর রুমের জানালা প্রায়ই ফাঁক রাখি ,সেই ফাঁক দিয়ে বিড়ালটি আম গাছ বেয়ে স্টোর রুমে এসে সব সময় এখানে ঘুমিয়ে থাকে। বিড়াল কে যখন তাড়াতে যাব, তখন দেখি বিড়ালের তিনটি বাচ্চা ,এটা দেখে আর তাড়াতে পারিনি।বিড়ালের বাচ্চা গুলো দেখেতে খুব সুন্দর হয়েছে, বিড়ালটি সব সময় আসা-যাওয়া করে এবং বাচ্চাদের দুধ দিয়ে চলে যায়।
একটানা ৩ দিন বিড়ালটি তার বাচ্চাদের দুধ দিয়ে যায়। এখানে দুটো বিড়াল সাদা হয়েছে আর একটা বিড়াল সাদা কালো মিশ্রিত, বাচ্চা গুলো দেখতে খুব নাদুসনুদুস হয়েছে।
বাচ্চা গুলো দেখে খুব মায়া লেগেছিল,তাই সব সময় লক্ষ রাখি বিড়াল কখন আসে দুধ দেয় কিনা
ঘরের পরিচায়িকার ছেলের নাম নাম প্রদীপ,
আমরা ওকে সংক্ষেপে পদু ডাকি।
পরিচায়িকার নাম হাসি, হাসি সকাল ৮:৩০ মিনিট কাজে আসে। পদুর বয়স ১২ বছর, দেখতে শান্ত হলেও সে নিরব দুষ্ট। পদু ঘরে আসলে স্টোর রুমে গিয়ে আমার ছেলের খেলনা নিয়ে প্রায়ই খেলে আমিও বারণ করি না , ছোট মানুষ ওর মায়ের সাথে আসে একটা কিছু নিয়ে তো ওকে থাকতেই
হবে।
স্টোর রুমে ঢোকার পরে ওকে বলে দিলাম এই ঘরে বিড়ালের বাচ্চা আছে ধরবে না কিন্তু।
ও বলল আচ্ছা আন্টি।
তারপর একটু সময় পার হতেই আমি আবার স্টোর রুমে যাই, গিয়ে দেখি বাচ্চাগুলোকে নিয়ে খাট থেকে নিচে ছুড়ে মারার চেষ্টা করছে পদু ,আমি রেগে গিয়ে বললাম, তুমি একি করছো?
পরে ওকে ওই রুম থেকে বের করে আমাদের রুমে নিয়ে আসলাম। তখনো বাচ্চাগুলোর মা আসেনি।
অপেক্ষা করতে করতে বেলা তখন সকাল ১২ টা
চিন্তায় পড়ে গেলাম।
মা বিড়াল টি আসছে না দেখে, একটা কাপে গরুর দুধ নিয়ে নিলাম । আর একটা ছোট চামচ নিয়ে সেই চামচ দিয়ে তিনটি বিড়ালকে দুধ খাইয়ে দেই সাথে ছিল আমার বড় ছেলে,ও দেখতে থাকে কিভাবে খাওয়াই। খাবার শেষ হলে বড় ছেলে আমায় বলে, মা বিকেলে যদি বিড়ালের মা না আসে তাহলে আমি দুধ খাইয়ে দেবো।
আমার বড় ছেলের নাম আদি।
আদি আরো বলল বিড়ালের বাচ্চা গুলোকে দুধ
খাওয়ালে !কিন্তু জল খাওয়ালে না যে মা?
আমি ওকে বুঝিয়ে বললাম বাচ্চাগুলো ছোট তো তাই জল খাবে না আর এমনিতেও বিড়াল জল কম খায়।
আমার ছেলে একটা পুরনো গামছাআর কিছু পুরনো কাপড় এনে ওদের রাখার জন্য সুন্দর করে একটা আরামের বিছানা তৈরি করে দেয়। তারপর বিড়ালের বাচ্চা গুলোকে সেই বিছানায় রাখে।
বিছানায় বাচ্চা গুলোকে রাখার সাথে সাথে সুন্দর ঘুমিয়ে যায়।এই দেখে তো আমি অবাক হয়ে গেলাম, এত ছোট ছেলে অথচ কি সুন্দর করে বিড়ালের যত্ন করছে।
পরে আদিকে নিয়ে স্টোর রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম । দুপুরের রান্না শেষ করলাম।
রান্নার পর আদি জিজ্ঞেস করল এখন কি স্টোর রুমে যেতে পারি মা?
আমি বললাম না বাবা বিকেলে যাব। দুপুরের খাবার শেষ করে বিকেলে স্টোর রুমে ঢুকে
দেখি তিনটা বিড়াল ছানার মধ্যে মা বিড়ালটি দুটো বিড়াল নিয়ে গেছে।
আর একটা ছানা নেয়নি।
আমি পড়ে গেলাম খুব মুশকিলে।
আমার সাথে আদিও ছিল তখন, ও জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে মা?
আমি বললাম, মা বেড়ালটি ওই যে দেখো! দুটো বাচ্চার মুখে করে নিয়ে যাচ্ছে।
পরে আদি বলল, এই ছানাটা কি আমার জন্য রেখে গেছে বিড়াল?
আমি বললাম না বাবা পরে হয়তো এসে নিয়ে যাবে। ছানাটি একা হয়ে যাওয়াতে সে দিন ভীষণ
ডাকাডাকি করল।
আমি দুধ গরম করে ছানাটিকে খাইয়ে, অপেক্ষা
করছিলাম মা বেড়ালটির জন্য।
এ ভাবে তিন দিন অপেক্ষা করার পর মা বিড়ালটি আর ফিরে এলো না।
আমি বুঝতে পারলাম বাচ্চাটিকে আমাদের লালন পালন করতে হবে, বাচ্চাটির যত্নে আমরা উঠে পড়ে লাগলাম।সময় পেলেই আমি আর আদি মিলে
দুধ খাওয়াই ,ছাদে ঘুরতে নিয়ে যাই।
এভাবে প্রায় দুই মাস পার হয়ে গেছে, বিড়াল ছানাটি একটু বড় হয়েছে। আমি ছানাটির সামনে গেলেই ও খুব চঞ্চল হয়ে ওঠে আমার সাথে খেলা করার জন্য । আমি হাঁটতে লাগলে আমার চারপাশে
ঘুরতে থাকে । আদিকে দেখলে ওর কোলে উঠে বসে থাকে।এ ভাবে বিড়ালটিকে নিয়ে আনন্দে দিন কাটে। পরের দিন সকাল ৮ টায় হাসি এসে ওর মতো করে কাজ শেষ করে চলে যায় ,আমি সকালের রান্নাবান্না শেষ করে দশটার দিকে স্টোর রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি বিড়াল ছানাটি নেই।
আমি প্রতিটা রুমে খুজলাম কিন্তু পেলাম না।
বিড়াল ছাড়া ঢেকে না দেখে আমার মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেল, কান্না চলে এলো।
বিড়ালছানাটি একা একা কোথাও যায় না এখন বেশ বড় হয়েছে বিড়াল ছানার মা আসতেও দেখিনি তবে ছানাটি কোথায় গেল?
সন্দেহ হলো পদুকে? পরের দিন হাসি যখন সকালবেলা কাজ করতে আসে? তখন হাসি কে জিজ্ঞেস করি, বিড়ালছানাটি কোথায়?
হাসি উত্তর দেয় পদু গতকাল সকালবেলা নিয়ে গেছে। আমি রেগে যাই ,হাসিকে বলি ও কাকে জিজ্ঞেস করে নিয়েছে? হাসি বলল ওর ভালো লেগেছে বিড়াল ছানাটি। আমি হাসিকে বললাম
ছানাটি আগামী দিন আসতে নিয়ে আসবে!
ও কিছুই বলল না। ছানার জন্য আমার ছেলের
ভীষণ রকম মন খারাপ। ও কান্না করছে।
আমি হাসিকে বুঝিয়ে বললাম! তুমি পদুকে বিড়াল ছানাটি নেয়ার সময় বাধা দিলে না কেন?
এ প্রশ্নের হাসি কোন উত্তর দিল না।
পরে বিড়াল ছানাটি আর নিয়ে আসেনি হাসি,
হাসির এমন কাজে তার উপর থেকে আমার আস্থা কমে যায়। এই গল্প থেকে আমরা শিখলাম বিপদগ্রস্থ প্রাণীদের একটু যত্নশীল হয়ে সাহায্য করলে তাদের প্রাণ বেঁচে যায়। আর শিখলাম ছল চাতুরি করলে মানুষের দৃষ্টিতে ছোট হতে হয়।