
আরিয়ান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে পনেরো দিন হয়। দু পায়ের অপারেশন হয়েছে গত সপ্তাহে। মাথার অপারেশনটা শুধু বাকি। চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘এ অপারেশনটাই সবচাইতে জটিল।’
আরিয়ানের পরিবার মধ্যবিত্ত। তাই ধারদেনা করে অপারেশনের টাকা জোগাড় করেছেন। তিন তিনটা অপারেশনে অনেক টাকার ব্যাপার। চিকিৎসক বলছেন, ‘মাথার অপারেশনটা সাকসেসফুল হলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে, তবে কতটুকু সফলতা আসবে সেটা একমাত্র উপরওয়ালা জানেন।’
আরিয়ান একটি কলেজের এইচএসসি মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগে থেকে বায়না ধরেছে যে, সে কলেজে উঠলে তাকে মোটরসাইকেল কিনে দিতে হবে। তার বাবা-মা বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও সে তা মানে না। তারা বলেছেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার। তোমার বুঝে শুনে চলা উচিত, তাছাড়া মোটরসাইকেল কেনার মত এতগুলো টাকা কোথায় পাবো!’
আরিয়ান তাদের কোন কথাই শুনতে রাজি নয়। তার একটাই একথা, মোটরসাইকেল কিনে দিতে হবে।
অনেক চাপাচাপির পর একটি বছর পার করেছেন তার বাবা মা। মনে করেছেন যে মোটরসাইকেল কিনে না দিলেও চলবে। কিন্তু না শেষ পর্যন্ত মোটরসাইকেল কিনে দিতেই হয়েছে। মোটরসাইকেল পেয়ে সে উরাধুরা চলা শুরু করেছে। ঘটনার দিন বিকেলে তার দুই বন্ধু আবির ও জাবিরকে সাথে নিয়ে আঞ্চলিক মহাসড়কের ‘সাপ’ খেলা খেলতে খেলতে কোথাও যাচ্ছিল। অকস্মাৎ ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিঁটকে পড়ে গিয়ে গাছের সাথে ঘা খেয়ে ঘটনাস্থলেই দুজন বিদায়।
মোটর সাইকেলটি চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে। ট্রাকটি কেউ আটকাতে পারেনি।
আজ আরিয়ানের মাথার অপরেশন। এজন্য এক লাখ বিশ হাজার টাকা জোগাড় করে তার মা-বাবা এলো হাসপাতালে। টাকাগুলো হাসপাতালের কাউন্টারে জমা দিল। তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার আগে তার মা চিকিৎসকের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘ডাক্তার সাব আপনার কাছে আল্লাহর দোহাই লাগে, আমার পোলাডারে বাঁচাইয়েন, তার যেন কোন কষ্ট না হয়, আমাগো একটা মাত্র পোলা। সে মরে গেলে আমরা বাঁচমু কারে লইয়া!’
আরিয়ানের অস্ত্রোপাচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যাওয়ার সময় তার মা বাবার উদ্দেশ্যে চিকিৎসখ বলে গেছেন, ‘অপারেশন সফল হয়েছে। তবে সে বেঁচে থাকলেও কোন কাজ করে খেতে পারবে না।’
রচনাকাল : ৩ অক্টোবর ২০২৪