ঢাকা ০১:১১ পিএম, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রবন্ধ – বই উৎসব : সাদিয়া আফরিন মুক্তা

  • আপডেট সময় : ০৩:৫৬:১১ পিএম, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪
  • ১০৫৯

 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উৎসব পালন করা হয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।বাংলাদেশেও বছরে অনেক রকম উৎসব ও অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। যেমন:ধর্মীয় উৎসব, সামাজিক উৎসব, জাতীয় উৎসব, প্রাণের উৎসব ইত্যাদি। উৎসবগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি আবার মেলা নামেও পরিচিত।উৎসব বা মেলা শব্দদ্বয়ের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা বিদ্যমান,আনন্দ -আবেগের সমন্বয়ে মিশ্রিত এক মুখর পরিসমাপ্তি। যেহেতু উৎসব অর্থ আনন্দের অনুষ্ঠান, সেহেতু যেকোন উৎসব মানেই সাধারণত আনন্দঘন কোন মুগ্ধ ও মুখর পরিবেশেকে বুঝায়।তবে সকল উৎসব কখনো কখনো আনন্দ বয়ে আনে না। বরং বয়ে আনে দুঃখ,শোক ইত্যাদি। যেমন- জাতীয় শোক দিবস,শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ইত্যাদি।

এগুলো সবই বাঙালির অনন্য উৎসব। আরেকটি অনন্য উৎসব হলো বই উৎসব। এটি একটি প্রাণের উৎসব। বই উৎসব বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি উদ্যোগ।এ উৎসব পালনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবছর ১ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কর্তৃক প্রথম থেকে পঞ্চমশ্রেণী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কর্তৃক ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়। এটি পাঠ্যপুস্তক উৎসব বা পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস নামেও পরিচিত।শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের সংকট নিরসনে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার বিনামূল্যে বই বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়।ওই বছর সরকার ২৯৬ কোটি ৭ লাখ টাকার পাঠ্যপুস্তক প্রদানের উদ্যোগ নেয় এবং ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি এটি প্রথম উদ্বোধন করেন।একদিনে বিশাল সংখ্যক বই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম।

২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ২৬ কোটি ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭১০ শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১ ভাগ,বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অস্বঃস্ফুর্ততা কেটে গেছে।কেননা এখন বছরের শুরুতেই সকল শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই চলে আসে।ফলে ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানপিপাসা বা পাঠ্যবইয়ের প্রতি আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়,পাশাপাশি প্রকৃতভাবে শিক্ষা গ্রহণের সময়ও বেশি পায়।

তাই পরীক্ষার ফলাফলও ভালো হয়।অপরপক্ষে এ উদ্যোগ যখন ছিল না তখন শিক্ষার্থীদের নতুন বই পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের মার্চ মাস অবধি অপেক্ষা করতে হতো।উচ্চতর শ্রেণির সহপাঠী বা আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে পুরনো বা জীর্ণশীর্ণ বই এনে বা কিনে নিয়ে পড়তে হতো,অনেকের শেষ পর্যন্ত তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো,কারণ কেনার সামর্থ্য ছিল না।বর্তমানে এই সমস্যাটা এখন আর নেই।কেননা এখন বছরের প্রথমদিনেই সকল শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই চলে আসে।তাই পুরাতন বই বহন করার দূর্গতি কাউকে বহন করতে হয় না।

এতে করে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরাও বিত্তবানদের মতো সমানভাবে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে, দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে।একটি দেশের উন্নয়ণের ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষা ছাড়া কোন দেশ বা জাতি উন্নতির চরম শিকরে আরোহন করতে পারে না।

এ উদ্যোগের ফলে দেশের সর্বস্তরের মানুষগণ শিক্ষার আলোয় নিজেদের আলোকিত করতে পারছে ইত্যাদি। এছাড়া বছরে একটা নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের দেশে একুশে বইমেলার আয়োজন করে থাকে এর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগণ।এমেলায় ছোট-বড়,বয়স্ক-বৃদ্ধ সকলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিভিন্ন ধরনের বই থাকে। মেলায় লেখক ও দর্শক-পাঠকদের যাবতীয় দূরত্ব কেটে যায়, একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়।মেলায় প্রবীণ লেখকদের পাশাপাশি নবীন লেখকদেরও আত্মপ্রকাশ ঘটে।এতে করে পাঠক সমাবেশে নতুন নতুন জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দীপ্ত বহৃিশিখার প্রদীপ জ্বালবার একটা সুযোগ মেলে।

শুধু তাই নয় এই বই উৎসবে কেনাবেচার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক আয় হয়,প্রকাশনীরা বেশি বেশি বই প্রস্তুত করার অর্ডার পান,এতে করে তারাও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান হয়।পরিশেষে বলা যায়, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না, সৈয়দ মুজতবা আলী বই সম্পর্কিত এই বাক্যটি যথার্থই বলছিলেন।কেননা আজ পর্যন্ত বই কিনে কেউ নিঃস্ব হয়েছে এ নজির কোথাও নেই।

বই মানুষের প্রাণের খোরাক। বই পড়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাই বইয়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য।কারণ একটা বই-ই পারে একজন মানুষকে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে,পাশাপাশি একজন মানুষকে সরল,সৎ,সুন্দর ও সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।সুতরাং ‘বই উৎসব ‘চিরদিন অক্ষয় থাক,সার্থক ও সফল হউক এর প্রতিটা উদ্দেশ্য,হউক যুগোপযোগী এই শুভকামনা করি।

প্রবন্ধ – বই উৎসব : সাদিয়া আফরিন মুক্তা

আপডেট সময় : ০৩:৫৬:১১ পিএম, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪

 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উৎসব পালন করা হয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।বাংলাদেশেও বছরে অনেক রকম উৎসব ও অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। যেমন:ধর্মীয় উৎসব, সামাজিক উৎসব, জাতীয় উৎসব, প্রাণের উৎসব ইত্যাদি। উৎসবগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি আবার মেলা নামেও পরিচিত।উৎসব বা মেলা শব্দদ্বয়ের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা বিদ্যমান,আনন্দ -আবেগের সমন্বয়ে মিশ্রিত এক মুখর পরিসমাপ্তি। যেহেতু উৎসব অর্থ আনন্দের অনুষ্ঠান, সেহেতু যেকোন উৎসব মানেই সাধারণত আনন্দঘন কোন মুগ্ধ ও মুখর পরিবেশেকে বুঝায়।তবে সকল উৎসব কখনো কখনো আনন্দ বয়ে আনে না। বরং বয়ে আনে দুঃখ,শোক ইত্যাদি। যেমন- জাতীয় শোক দিবস,শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ইত্যাদি।

এগুলো সবই বাঙালির অনন্য উৎসব। আরেকটি অনন্য উৎসব হলো বই উৎসব। এটি একটি প্রাণের উৎসব। বই উৎসব বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি উদ্যোগ।এ উৎসব পালনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবছর ১ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কর্তৃক প্রথম থেকে পঞ্চমশ্রেণী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কর্তৃক ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়। এটি পাঠ্যপুস্তক উৎসব বা পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস নামেও পরিচিত।শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের সংকট নিরসনে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার বিনামূল্যে বই বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়।ওই বছর সরকার ২৯৬ কোটি ৭ লাখ টাকার পাঠ্যপুস্তক প্রদানের উদ্যোগ নেয় এবং ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি এটি প্রথম উদ্বোধন করেন।একদিনে বিশাল সংখ্যক বই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম।

২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ২৬ কোটি ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭১০ শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১ ভাগ,বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অস্বঃস্ফুর্ততা কেটে গেছে।কেননা এখন বছরের শুরুতেই সকল শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই চলে আসে।ফলে ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানপিপাসা বা পাঠ্যবইয়ের প্রতি আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়,পাশাপাশি প্রকৃতভাবে শিক্ষা গ্রহণের সময়ও বেশি পায়।

তাই পরীক্ষার ফলাফলও ভালো হয়।অপরপক্ষে এ উদ্যোগ যখন ছিল না তখন শিক্ষার্থীদের নতুন বই পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের মার্চ মাস অবধি অপেক্ষা করতে হতো।উচ্চতর শ্রেণির সহপাঠী বা আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে পুরনো বা জীর্ণশীর্ণ বই এনে বা কিনে নিয়ে পড়তে হতো,অনেকের শেষ পর্যন্ত তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো,কারণ কেনার সামর্থ্য ছিল না।বর্তমানে এই সমস্যাটা এখন আর নেই।কেননা এখন বছরের প্রথমদিনেই সকল শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই চলে আসে।তাই পুরাতন বই বহন করার দূর্গতি কাউকে বহন করতে হয় না।

এতে করে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরাও বিত্তবানদের মতো সমানভাবে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে, দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে।একটি দেশের উন্নয়ণের ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষা ছাড়া কোন দেশ বা জাতি উন্নতির চরম শিকরে আরোহন করতে পারে না।

এ উদ্যোগের ফলে দেশের সর্বস্তরের মানুষগণ শিক্ষার আলোয় নিজেদের আলোকিত করতে পারছে ইত্যাদি। এছাড়া বছরে একটা নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের দেশে একুশে বইমেলার আয়োজন করে থাকে এর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগণ।এমেলায় ছোট-বড়,বয়স্ক-বৃদ্ধ সকলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিভিন্ন ধরনের বই থাকে। মেলায় লেখক ও দর্শক-পাঠকদের যাবতীয় দূরত্ব কেটে যায়, একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়।মেলায় প্রবীণ লেখকদের পাশাপাশি নবীন লেখকদেরও আত্মপ্রকাশ ঘটে।এতে করে পাঠক সমাবেশে নতুন নতুন জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দীপ্ত বহৃিশিখার প্রদীপ জ্বালবার একটা সুযোগ মেলে।

শুধু তাই নয় এই বই উৎসবে কেনাবেচার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক আয় হয়,প্রকাশনীরা বেশি বেশি বই প্রস্তুত করার অর্ডার পান,এতে করে তারাও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান হয়।পরিশেষে বলা যায়, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না, সৈয়দ মুজতবা আলী বই সম্পর্কিত এই বাক্যটি যথার্থই বলছিলেন।কেননা আজ পর্যন্ত বই কিনে কেউ নিঃস্ব হয়েছে এ নজির কোথাও নেই।

বই মানুষের প্রাণের খোরাক। বই পড়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাই বইয়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য।কারণ একটা বই-ই পারে একজন মানুষকে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে,পাশাপাশি একজন মানুষকে সরল,সৎ,সুন্দর ও সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।সুতরাং ‘বই উৎসব ‘চিরদিন অক্ষয় থাক,সার্থক ও সফল হউক এর প্রতিটা উদ্দেশ্য,হউক যুগোপযোগী এই শুভকামনা করি।