মানুষবাঙ্গালী

মানুষ আমরা বাঙালি আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে,

মানুষবাঙালি মুক্তস্বাধীন শতশতাব্দী শেষে;

অমিতসাহসী প্রমিতবাঙালি শেখ মুজিবের বেশে।

 

নিকষিত যার মানবস্বরূপ মা-সায়েরার ঘরে,

বিকশিত তার রূপ অপরূপ শতশতাব্দী ধরে;

মুক্তিযুদ্ধে শহিদেরা প্রাণ দিয়ে গেলো অকাতরে।

 

এই বাংলার মাটি পরিপাটি সোনার চেয়েও খাঁটি,

ঘুমায় বাঙালি এ মাটির বুকে বিছিয়ে শীতলপাটি;

নাই নাই ভয়, আছে শুধু জয়, জয় দুর্জয় ঘাঁটি।

 

গোলাভরা ধান মাঠভরা গান শস্যের সমাহার,

শান্তিসুখের এই বাংলায় সম্প্রীতি বেশুমার;

উদয়শপথে কাটে পথে পথে মনের অন্ধকার।

 

শুরুর আগেও শুরু থেকে যায়, যায় না সহজে চেনা,

বর্তমান ও অতীতের মাঝে কত সেতু-লেনাদেনা;

অনাদিকালের পারানির কড়ি সম্বল বেচাকেনা।

 

ইতিহাস শুরু লিখিত যখন, তারো আগে ইতিহাস,

গুহা ছেড়ে ঘরে পললভিটায় বঙ্গজাতির বাস;

ঋতুতে ঋতুতে রীতিতে রীতিতে সব ফসলের চাষ।

 

রাঢ় হরিকেল বন উপবন সমতট আসমান,

মিলেছে এখানে নদীদিগন্ত মোহনায় ধাবমান;

ওড়ে প্রজাপতি, পরিযায়ী ডানা, আলপথ বহমান।

 

কত পথ শেষে কত দিক থেকে পথিক মিলায় বুক,

বাংলামায়ের স্নেহশীলা বুকে ব্যাকুল আপন মুখ;

জগৎমানুষ মিলেছে এ বুকে, মিলনেই মূল সুখ।

 

মিলিতবাঙালি প্রমিতবাঙালি ঘর তার চরাচর,

কাঁটাতারহীন বিশ্বরাষ্ট্রে সব ঘর তার ঘর;

পরস্পরের পরমাত্মীয়, কেউ নয় কারো পর।

 

মিলিতবাঙালি বিজয়ী বাঙালি বিশ্বমানুষ আজ;

সব দেশ তার আপন স্বদেশ, মাথায় মুক্তি-তাজ।

 

জন্মস্মর

ইতিহাসে ইতিহাসে পরিশ্রুত এই দেশ, বাংলাদেশ,

আদি আর অনন্তের দেশ;

তুমি হেঁটে যাচ্ছো তার পথে পথে,

আলপথে, বনপথে, মনোপথে,

মৌনমগ্ন পথিকের বেশে...

তোমার গমনপথে রঙধনু, কাশফুল, পদ্মাগঙ্গা, তরঙ্গ অশেষ;

তুমি গণবাঙালির মনোকন্যা, চিরকাল বাঙালিকে ভালোবেসে।

 

পিতার আলোক আর মাতার আশীষ, জাতিমানুষের বহতা মমতা;

অভেদ-সাম্যের দেশে চাষ করো পলিবীজ, সর্বশস্য, মানব-সমতা;

বাঙালি প্রমু্ক্ত জাতি,

ধর্মবর্ণ-সম্প্রদায়-নির্বিশেষে

সুন্দরের নিরপেক্ষ ধ্যান;

জাতিতে জাতিতে সখ্য, তুমি সেই ঐক্য-সূত্র, মানবিক সুন্দরের ঘ্রাণ।

 

তোমাকে চিনেছে এই বিলঝিল,

নভোনীল, শঙ্খচিল,

বহমান নদীর স্বীকৃতি,

মুহূর্ত অনন্ত হয়ে কাল থেকে কালান্তরে সর্বপ্রজন্মের স্মৃতি;

তেপান্তর পার হয়ে জনপদে রাজপথে পরিব্যাপ্ত তোমার ঠিকানা;

দেশ আর মহাদেশ পার হয়ে ভাষা আর বিশ্ববাংলা বাঙালির ডানা।

 

তুমি সেই ডানার বিস্তার,

তুমি সেই জাতক অপার:

তোমাকে পাহারা দেয় জলেস্থলে নভোতলে জয়-বাংলা,

বিজয়ীর কলস্বর, স্মৃতিস্মর নদী মধুমতি;

তুমি সেই জন্মস্মর, চিরজন্মে চিরবঙ্গে তোমার বসতি।

 

বঙ্গজাতিমাতা

তুমি মাতা, আদিমাতা হাওয়ার সুরত,

মা মরিয়ম আমিনার প্রদর্শিত পথ;

সন্তানকে বুকে ধরে যাও দশ দিকে,

বংশগোত্রজাতিসত্য নিজে নাও শিখে;

আদিবঙ্গ জনপদ, ব্রত, সদাচার,

লালন করেছো তুমি সমাজ-সংসার;

প্রবিশ্ব পড়েছে বাঁধা চাবির গোছায়,

মাঝির নোঙর তুমি বঙ্গের নৌকায়।

 

বঙ্গ যদি দেশ তবে জনগোষ্ঠী জাতি,

জগৎ জুড়িয়া আছে স্বজাতির জ্ঞাতি;

তুমি বুকে ধরে আছো সকলের বুক,

জাতিসন্তানের সুখে খোঁজো নিজ সুখ।

সংকটে সংশয়ে তুমি জাতিজ্ঞাতি ত্রাতা;

হে জননী হে ধরণি বঙ্গজাতিমাতা।