ঢাকা ০১:০২ পিএম, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুকান্তের আহ্বানে শীতের সকাল : রফিকুল ইসলাম

  • আপডেট সময় : ০৯:২৪:১৪ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৪
  • ১১৪৩
‘হে সূর্য!
তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলো দিও
আর উত্তাপ দিও
রাস্তার ধারের ওই উলঙ্গ ছেলেটাকে।’
★ হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে জবুথবু গ্রামের ভোর । কুয়াশার  চাদরে  ঘুমটা মুড়ি দিয়ে আসে শীতের বুড়ি, যেনো তার কোন ব্যস্ততা নেই, ধীরস্থির পায়ে আসে ।  উত্তরের শীতল বাতাস বয়তে থাকে শিরশির করে। শীত সকালে  বাড়ির উঠোনের একপ্রান্তে গনগনে জলন্ত আগুন জ্বালানো হতো, সেই আগুন ঘিরে বসতো  বাড়ির ছেলেবুড়ো । টিনের চালের আদর খেয়ে শীতগুলো টুপটাপ  শিশির হয়ে গলে গলে পড়তো। অনেক সময় সখ করে কাজের মানুষের সাথে কাঁপতে কাঁপতে  মাঠে যেতাম খেজুরের রস খুলে আনতে , শীতের শিশির আর পথের ধূলো  মিশে কাদা হয়ে পা’দুটি অবাশ হয়ে যেতো । মাঝে মাঝে এমন কুয়াশা পড়তো অদূরে কিছুই দেখা যেতো না, সে এক অন্যরকম মজা পেতাম। মাঠের মানুষ  হাকডাক দিয়ে জানান দিতো কে কোথায় আছে। সারি বেঁধে কাঁধে কাছিরা কাঁপতে ক্ঁপতে  খেজুরের রসের হাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরতো।   তখন আজকের মতো উন্নত মানের গরম কাপড় ছিল না, মনে পড়ে ,ছোট বেলায় মা” গলায় কাপড় বেঁধে দিতো, তারপর আগুনের কাছে যেয়ে বসতাম, সমস্ত গ্রাম জুড়ে যেখানে সেখানে  নাড়ার আগুন জ্বালানো হতো, সবাই মিলে আগুন পোহাতো আর খোশগল্পে মেতে উঠতো । শীতের  সেই কষ্টের মধ্যেও মজা করতাম, মুখ খুললেই ধোঁয়া বের হতো, বারবার করতাম, বারবার ধোঁযা বের হতো।
 শীতকাল মানেই প্রথমে যে ভয়টা মাথায় আসতো  তা হলো গোসল করা। লেপের  ভেতর থেকে বের হতেই  ইচ্ছে করতো না। এক সময় ঘনকুয়াশা ভেদ করে সূর্যের আলো জ্বলে উঠতেই ঝলমল করে হেসে উঠতো সারাগ্রাম খানি। সকালে সোনালী রোদে হীরক দ্যুতি ছড়িয়ে দিতো গ্রাম-গঞ্জে মাঠে,-ঘাটে।  সূর্যের উত্তাপ নিতে ঘর থেকে মানুষ বাইরে বেরিয়ে আসতো।  খেজুর রসের মন মাতানো মৌ মৌ গন্ধে মেতে উঠতো সারাপাড়া জুড়ে। প্রায় বাড়িতেই খেজুরের রস জ্বালানো হতো।
আজ আর গ্রামগুলো তেমন নেই অনেকটা  শহরের মত গড়ে উঠেছে। মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে , ঘরে ঘরে বিদ্যূৎ এসেছে। জ্যাকেট কাকে বলে চিনতাম না, এখন কত রকম শীতের  পোষাক উঠেছে।
 শীতকালে ঠাণ্ডা পড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো কোনো সময় শীতের তীব্রতা এত বেশি হয়, তাকে স্বাভাবিক শীত বলা যায় না। এমন অস্বাভাবিক শীতের খবর শুনি পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ২.৩ ডিগ্রী সেঃ নেমে আসে,  এটা আমাদের জন্য স্বাভাবিক শীত নয়।
সেইসব ছিন্নমূল মানুষদের কথা ভাবি  একটুকরো শীতের কাপড় বা মাথা গোঁজার ঠাই নেই যাদের , তাদের জীবনে শীত আনন্দের নয়, শীত আসে  ছিন্নমূল মানুষদের জন্য অভিশাপের, দুঃখের। এখনো হাজারও  ছিন্নমূল  মানুষ পাতলা কাপড়ে  শীতে কাঁপে ফুটপাতে।
 আর তাই আসুন, যে যার সাধ্যমত কাছের দরিদ্র মানুষগুলোর  প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই এই  পৃথিবীকে গড়ে  তুলি সবার জন্য বসবাস যৌগ্য সহানুভূতির অপার পৃথিবী।

সুকান্তের আহ্বানে শীতের সকাল : রফিকুল ইসলাম

আপডেট সময় : ০৯:২৪:১৪ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৪
‘হে সূর্য!
তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে
উত্তাপ আর আলো দিও
আর উত্তাপ দিও
রাস্তার ধারের ওই উলঙ্গ ছেলেটাকে।’
★ হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে জবুথবু গ্রামের ভোর । কুয়াশার  চাদরে  ঘুমটা মুড়ি দিয়ে আসে শীতের বুড়ি, যেনো তার কোন ব্যস্ততা নেই, ধীরস্থির পায়ে আসে ।  উত্তরের শীতল বাতাস বয়তে থাকে শিরশির করে। শীত সকালে  বাড়ির উঠোনের একপ্রান্তে গনগনে জলন্ত আগুন জ্বালানো হতো, সেই আগুন ঘিরে বসতো  বাড়ির ছেলেবুড়ো । টিনের চালের আদর খেয়ে শীতগুলো টুপটাপ  শিশির হয়ে গলে গলে পড়তো। অনেক সময় সখ করে কাজের মানুষের সাথে কাঁপতে কাঁপতে  মাঠে যেতাম খেজুরের রস খুলে আনতে , শীতের শিশির আর পথের ধূলো  মিশে কাদা হয়ে পা’দুটি অবাশ হয়ে যেতো । মাঝে মাঝে এমন কুয়াশা পড়তো অদূরে কিছুই দেখা যেতো না, সে এক অন্যরকম মজা পেতাম। মাঠের মানুষ  হাকডাক দিয়ে জানান দিতো কে কোথায় আছে। সারি বেঁধে কাঁধে কাছিরা কাঁপতে ক্ঁপতে  খেজুরের রসের হাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরতো।   তখন আজকের মতো উন্নত মানের গরম কাপড় ছিল না, মনে পড়ে ,ছোট বেলায় মা” গলায় কাপড় বেঁধে দিতো, তারপর আগুনের কাছে যেয়ে বসতাম, সমস্ত গ্রাম জুড়ে যেখানে সেখানে  নাড়ার আগুন জ্বালানো হতো, সবাই মিলে আগুন পোহাতো আর খোশগল্পে মেতে উঠতো । শীতের  সেই কষ্টের মধ্যেও মজা করতাম, মুখ খুললেই ধোঁয়া বের হতো, বারবার করতাম, বারবার ধোঁযা বের হতো।
 শীতকাল মানেই প্রথমে যে ভয়টা মাথায় আসতো  তা হলো গোসল করা। লেপের  ভেতর থেকে বের হতেই  ইচ্ছে করতো না। এক সময় ঘনকুয়াশা ভেদ করে সূর্যের আলো জ্বলে উঠতেই ঝলমল করে হেসে উঠতো সারাগ্রাম খানি। সকালে সোনালী রোদে হীরক দ্যুতি ছড়িয়ে দিতো গ্রাম-গঞ্জে মাঠে,-ঘাটে।  সূর্যের উত্তাপ নিতে ঘর থেকে মানুষ বাইরে বেরিয়ে আসতো।  খেজুর রসের মন মাতানো মৌ মৌ গন্ধে মেতে উঠতো সারাপাড়া জুড়ে। প্রায় বাড়িতেই খেজুরের রস জ্বালানো হতো।
আজ আর গ্রামগুলো তেমন নেই অনেকটা  শহরের মত গড়ে উঠেছে। মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে , ঘরে ঘরে বিদ্যূৎ এসেছে। জ্যাকেট কাকে বলে চিনতাম না, এখন কত রকম শীতের  পোষাক উঠেছে।
 শীতকালে ঠাণ্ডা পড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো কোনো সময় শীতের তীব্রতা এত বেশি হয়, তাকে স্বাভাবিক শীত বলা যায় না। এমন অস্বাভাবিক শীতের খবর শুনি পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ২.৩ ডিগ্রী সেঃ নেমে আসে,  এটা আমাদের জন্য স্বাভাবিক শীত নয়।
সেইসব ছিন্নমূল মানুষদের কথা ভাবি  একটুকরো শীতের কাপড় বা মাথা গোঁজার ঠাই নেই যাদের , তাদের জীবনে শীত আনন্দের নয়, শীত আসে  ছিন্নমূল মানুষদের জন্য অভিশাপের, দুঃখের। এখনো হাজারও  ছিন্নমূল  মানুষ পাতলা কাপড়ে  শীতে কাঁপে ফুটপাতে।
 আর তাই আসুন, যে যার সাধ্যমত কাছের দরিদ্র মানুষগুলোর  প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই এই  পৃথিবীকে গড়ে  তুলি সবার জন্য বসবাস যৌগ্য সহানুভূতির অপার পৃথিবী।